মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করার ১৫টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়

মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করার ১৫টি কার্যকরী ঘরোয়া উপায়

মাইগ্রেন কি এবং কেন হয়?

মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা যা সাধারণত মাথার এক পাশে তীব্র যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। এই মাথাব্যথার সমস্যা কখনও কখনও কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মাইগ্রেনের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে আলো ও শব্দে সংবেদনশীলতা, বমি বমি ভাব এবং দৃষ্টি সমস্যা।

pic


মাইগ্রেনের প্রধান কারণসমূহ:

  • হরমোনের পরিবর্তন
  • মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
  • নির্দিষ্ট কিছু খাবার ও পানীয়
  • ঘুমের অনিয়ম
  • পরিবেশগত পরিবর্তন
  • বংশগত প্রবণতা

মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

আদা চা: মাইগ্রেনের দ্রুত সমাধান

আদা হলো মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর একটি উৎকৃষ্ট ঘরোয়া উপাদান। আদাতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান মাইগ্রেনের যন্ত্রণা উপশমে সাহায্য করে। এক কাপ গরম পানিতে তাজা আদা কুচি দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। দিনে ২-৩ বার এই আদা চা পান করলে মাইগ্রেনের ব্যথা কমে যাবে।

পিপারমিন্ট তেলের মালিশ

পিপারমিন্ট তেল মাইগ্রেনের ঘরোয়া চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর। এই তেলের শীতল প্রভাব মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। কপালে এবং ঘাড়ে পিপারমিন্ট তেল হালকা হাতে মালিশ করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

ল্যাভেন্ডার অয়েলের সুগন্ধ

মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ল্যাভেন্ডার অয়েল একটি চমৎকার প্রাকৃতিক সমাধান। গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে তার বাষ্প নিঃশ্বাসের সাথে নিন। অথবা কপালে ল্যাভেন্ডার অয়েল মালিশ করুন। এটি মাইগ্রেনের ব্যথা উপশমে দ্রুত কাজ করে।

ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

মাইগ্রেনের ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান। পালং শাক, কলা, আভোকাডো, বাদাম ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়তে পারে।

পর্যাপ্ত পানি পান

ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা মাইগ্রেনের একটি সাধারণ কারণ। মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন। এটি মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে এবং প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।

ঠান্ডা সেঁক

মাইগ্রেনের ব্যথা উপশমের জন্য ঠান্ডা সেঁক একটি সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি। একটি কাপড়ে বরফের টুকরো মুড়িয়ে তা কপালে বা ঘাড়ে রাখুন। এটি রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

ক্যাফেইনের সঠিক ব্যবহার

সীমিত পরিমাণে ক্যাফেইন মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে পারে। এক কাপ কফি বা চা পান করলে মাইগ্রেনের ব্যথা কিছুটা উপশম হতে পারে। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।

যথেষ্ট ঘুম

ঘুমের অনিয়ম মাইগ্রেনের একটি বড় কারণ। নিয়মিত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। খুব বেশি বা খুব কম ঘুম মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং সকালে নির্দিষ্ট সময়ে উঠার চেষ্টা করুন।

যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন

মানসিক চাপ মাইগ্রেনের একটি প্রধান কারণ। নিয়মিত যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন করলে মানসিক চাপ কমে এবং মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। দিনে ১৫-২০ মিনিট ধ্যান বা প্রাণায়াম করুন।

ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ খাবার

রিবোফ্লাভিন বা ভিটামিন বি২ মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ডিম, দুধ, দই, বাদাম, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি খাবারে ভিটামিন বি২ পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ভিটামিন বি২ গ্রহণ করলে মাইগ্রেনের আক্রমণের সংখ্যা কমে যায়।

অ্যাকুপ্রেশার থেরাপি

মাইগ্রেনের ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য অ্যাকুপ্রেশার একটি কার্যকর পদ্ধতি। হাতের তালুতে থাম্ব ও ইনডেক্স ফিঙ্গারের মাঝখানের অংশে চাপ প্রয়োগ করুন। এই পয়েন্টটি মাইগ্রেনের ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। দিনে কয়েকবার ১-২ মিনিট ধরে এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

হলুদ দুধ

হলুদে থাকা কারকুমিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এক গ্লাস গরম দুধে আধা চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। এটি মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে এবং প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করবে।

ব্যায়াম

নিয়মিত হালকা ব্যায়াম মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটুন বা সাঁতার কাটুন। ব্যায়াম করলে এন্ডোরফিন হরমোন নিঃসৃত হয় যা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে।

ট্রিগার খাবার এড়িয়ে চলুন

চকলেট, পনির, প্রক্রিয়াজাত মাংস, কৃত্রিম মিষ্টি ইত্যাদি খাবার মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। কোন খাবার আপনার মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ায় তা লক্ষ্য করুন এবং সেই খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন।

অন্ধকার ঘরে বিশ্রাম

মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে একটি শান্ত, অন্ধকার ঘরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন। আলো ও শব্দ মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই অন্ধকার পরিবেশে বিশ্রাম নিলে মাইগ্রেনের ব্যথা দ্রুত কমে আসবে।



মাইগ্রেন প্রতিরোধের উপায়

মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে শুধু ঘরোয়া চিকিৎসাই নয়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও জরুরি:

  • নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
  • নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলুন
  • নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন
  • ট্রিগার খাবার চিহ্নিত করে এড়িয়ে চলুন

মাইগ্রেন সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন: মাইগ্রেনের ব্যথা কতক্ষণ স্থায়ী হতে পারে?

উত্তর: মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত ৪ ঘন্টা থেকে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যদি ৭২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে মাইগ্রেনের ব্যথা থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রশ্ন: মাইগ্রেনের ব্যথা কি বংশগত?

উত্তর: হ্যাঁ, মাইগ্রেনের সমস্যা বংশগত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের পরিবারে মাইগ্রেনের ইতিহাস আছে তাদের মাইগ্রেনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

প্রশ্ন: মাইগ্রেনের ব্যথা কি পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব?

উত্তর: মাইগ্রেনের সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়, তবে সঠিক জীবনযাপন ও চিকিৎসার মাধ্যমে মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। উপরে উল্লিখিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে মাইগ্রেনের আক্রমণের সংখ্যা ও তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

প্রশ্ন: শিশুদেরও কি মাইগ্রেন হতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, শিশুদেরও মাইগ্রেন হতে পারে। শিশুদের মাইগ্রেনের লক্ষণ বড়দের থেকে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। শিশুর মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা আলো-শব্দে সংবেদনশীলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রশ্ন: মাইগ্রেনের ব্যথার সময় কি খাবার খাওয়া উচিত?

উত্তর: মাইগ্রেনের ব্যথার সময় হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া ভালো। আদা চা, টোস্ট, কলা ইত্যাদি খেতে পারেন। ভারী বা তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:

  • হঠাৎ করে তীব্র মাথাব্যথা শুরু হলে
  • মাথাব্যথার সাথে জ্বর, ঘাড় শক্ত হওয়া বা খিঁচুনি হলে
  • মাথাব্যথার সাথে দৃষ্টিশক্তি হারানো বা কথা জড়িয়ে গেলে
  • ৫০ বছর বয়সের পর প্রথমবারের মতো তীব্র মাথাব্যথা হলে
  • মাথায় আঘাত পাওয়ার পর মাথাব্যথা শুরু হলে

সর্বশেষ কথা

মাইগ্রেনের ব্যথা একটি যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা হলেও উপরে উল্লিখিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মাইগ্রেনের ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করে এড়িয়ে চলুন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, মাইগ্রেনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ধৈর্য্য ও নিয়মানুবর্তিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url