হাদিসের আলোকে যেভাবে মা-বাবার হৃদয় জয় করবেন
মা-বাবার হৃদয়ে জায়গা পাওয়াই প্রকৃত ভালোবাসা
মানুষ জীবনে অনেক কিছু অর্জন করতে চাই সাফল্য টাকা সম্মান। তবে মা-বাবার হৃদয় করাটা হলো সবচেয়ে বড় অর্জনের মধ্যে একটি। যেভাবে মা-বাবার হৃদয় করবেন তা যদি আপনি জানতে পারেন তাহলে জীবনের অনেক অতি সহজ হয়ে যায়। এটা এ সম্পর্কটা যত আবেগের ততটাই দায়িত্বের।
ছোট ছোট কাজে ভালোবাসার প্রকাশ
আমরা অনেক সময় ভাবি বিশাল কিছু করলেই মা-বাবা খুশি হবে না আসলে তা নয়। প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজে, যেমন পানি এনে দেওয়া, ওষুধ মনে করিয়ে দেওয়া বা চুপচাপ পাশে বসে থাকা এসব ছোট আচরণ দিয়ে যেভাবে মা বাবার হৃদয় করবেন তা অন্য কোন উপায় সম্ভব নয়।
মা-বাবার সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি
ইসলামে মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয় বরং এটি ঈমানের অঙ্গ। মহানবী (সা:) বলেছেন: "আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত। "
এই হাদিস থেকেই বোঝা যায় যেভাবে মা-বাবা হৃদয় করবেন, তা আসলে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের পথ।
মায়ের মর্যাদা ৩ গুণ বেশি
এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা:) কে জিজ্ঞেস করেন "আমার উপর কার হক সবচেয়ে বেশি? তিনি তিনবার বলেছিলেন : তোমার মা, তারপর চতুর্থবারে বলেছিলেন তোমার বাবা "। (সহীহ বুখারী ৫৯৭১)
এই হাদিস থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে, মা-বাবার হৃদয় জয় করতে, শুরু করতে হবে মায়ের প্রতি অগ্রাধিকার দিয়ে, তার কষ্ট, অনুভূতি ও চাহিদা বুঝে।
উত্তম আচরণের শ্রেষ্ঠ ইবাদত
রাসুল সাঃ বলছেন: "যে ব্যক্তি দীর্ঘ জীবন ও রিজিকের প্রশস্ততা চায় সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে" (সহীহ বুখারী -৫৯৮৫)
মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার আত্মীয়তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই মা-বাবা মন জয় করলে, তা আপনার জীবনে বরকতের উৎস হতে পারে।
মুখের ভাষা ও ব্যবহারেই হৃদয় জয় হয়
মা বাবার সঙ্গে কথা বলার সময় কেমন ব্যবহার করতে হবে, কোরআন বলছে: "তুমি তাদের সঙ্গে 'উফ' পর্যন্ত বলোনা এবং ধমকের সুরে কথা বলোনা"। (সূরা ইসরা- ২৩)
তাহলে, যেভাবে মা বাবা হৃদয় জয় করবেন তার প্রথম ধাপেই হলো মধুর ভাষা নরম ব্যবহার ও বিনয়ের সঙ্গে কথা বলা।
দোয়ার মাধ্যমে হৃদয়ে জায়গা
নবী করিম (সা:) সব সময় তার মা-বাবার জন্য দোয়া করতেন। কুরআনে বলা হয়েছে: "হে আমার প্রতিপালক, তাদের প্রতি দয়া কর, যেমন তারা শৈশবে আমাকে লালন পালন করেছিলেন"। ( সূরা ইসরা -২৪)
আপনি যখন তাদের জন্য দোয়া করবেন তখনই বোঝা যায়, তা মা-বাবার সাথে আধ্যাত্মিক এক সংযুক্ত তৈরি করে।
তাদের খেদমত করা সুন্নাহ
রাসূলুল্লাহ (সা:) নিজের বৃদ্ধ মায়ের সেবা করা সাহাবীকে বলেছেন: "তোমার জান্নাত তাদের পায়ের নিচে" ( নাসাঈ -৩১০৪)
তাই যেভাবে মা বাবা হৃদয় জয় করবেন তা বাস্তবে রূপ পায় তখনই, যখন আপনি স্বেচ্ছায় ও ভালবেসে তাদের সেবা করেন।
বৃদ্ধ বয়সে অবহেলা নয় অধিক যত্ন
একজন ব্যক্তি যদি তার বাবা-মাকে বৃদ্ধ বয়সে পায় অথচ তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতে না যায়, তবে তার জন্য নবী (সা:) আফসোস প্রকাশ করেছেন :
"ধ্বংস হোক সেই ব্যক্তি যে তার বাবা-মাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েও জান্নাতে যেতে পারল না"। (মুসলিম- ২৫৫১)
এ থেকেই স্পষ্ট যে, মা-বাবা মন জয় করাটা তাদের বৃদ্ধ বয়সে আপনার যত্নে নিহিত।
সঙ্গ ও সময় দেওয়া
রাসুল (সা:) নিজের নানা সময়ে মা আমিনার কথা স্মরণ করতেন, তার কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন, চোখে অশ্রু নিয়ে দোয়া করেছিলেন।
এই আচরণ শিক্ষা দেয় যেভাবে মা-বাবা হৃদয় জয় করবেন তা শুধু জীবিত অবস্থায় নাই মৃত্যুর মৃত্যুর পরও তাদের স্মরণ ও দোয়ার মাধ্যমে।
তাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে দিন
অনেক সময় মা বাবা ভুল করতে পারেন। তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট না হয়ে ক্ষমা করে দেওয়া ইবাদতের অংশ। "তোমরা যদি ক্ষমা করো উপেক্ষা করো ও দয়া করো, তবে আল্লাহও ক্ষমাশীল, দয়ালু "। (সুরা তাগাবুণ- ১৪)
মা-বাবার মন জয় করতে হলে তা অনেকটা মাফ করার শক্তি ও ভালোবাসা গভীরতা থেকে প্রকাশ পায়।
তাদের প্রাপ্ত সম্মান বজায় রাখুন
একজন সাহাবী তার পিতার সঙ্গে তর্ক করলে নবী (সা:) বলেছিলেন: "তুমি ও তোমার সম্পদ- সবই তোমার পিতার"। ( ইবনে মাজাহ -২২৯১)
অর্থাৎ, বাবা মায়ের মর্যাদা আপনার নিজের চেয়ে উপরে। তাই যেভাবে মা বাবা হৃদয় জয় করবেন তা হতে হবে তাদের শ্রদ্ধা দিয়ে, নয়তো সেটা অসম্পূর্ণ থাকবে।
তাদের জন্য সদকায়ে জারিয়া
রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন :
"মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি ছাড়া, সদকায় জারিয়া, উপকারী জ্ঞান এবং এমন সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে"। (সহীহ মুসলিম- ১৬৩১)
আপনার দান, ইলম, দোয়ার মাধ্যমে যেভাবে মা-বাবার হৃদয় জয় করবেন তা কিয়ামত পর্যন্ত উপকারে আসবে।
তাদের বন্ধুদের সম্মান করুন
হাদিসে আছে, নবী করীম (সা:) তার দুধ ভাই ও পিতার বন্ধুদের সঙ্গে সদ্ব্যব্যবহার করতেন।
"বাবার বন্ধুকে সম্মান করা পিতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অংশ" (সহীহ মুসলিম -২৫৫২)
এভাবে মা-বাবার মন জয় করলে তা তাদের সামাজিক বৃত্তের মধ্যে সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমও হতে পারে।
তাদের ইচ্ছা গুলো পূরণের চেষ্টা করুন
রাসুল (সাঃ) তার চাচা আবু তালিবের ইচ্ছা পুরণে সর্বাত্বক চেষ্টা করেছিলেন। তাদের ইচ্ছা ও চাহিদা পূরণই বাস্তবে সেই পথ, যেভাবে মা-বাবা হৃদয় জয় করবেন এবং তাদের মুখে হাসি ফোটাবেন।
তাদের কারণে গর্বিত হোন
মা-বাবার কৃতিত্ব ও জীবন সংগ্রামকে ছোট না করে গর্বের সঙ্গে স্মরণ করুন। তা-ই হবে এমন এক সুন্দর উপায় যেভাবে মা-বাবা হৃদয়ে জয় করবেন, সম্মান ও শ্রদ্ধার মিছিলে।
প্রতিদিন অন্তর থেকে ভালোবাসা প্রকাশ
শুধু দায়িত্ব নয়, ভালোবাসা থেকেও মা-বাবার প্রতি আপনার আচরণ হওয়া উচিত। "তোমায় ভালোবাসি মা" "তুমি আমার জীবনের সেরা উপহার" এমন শব্দ বলে সবচেয়ে সহজ পথ, যেভাবে মা-বাবার মন জয় করেন আন্তরিকভাবে ।
শেষ কথা, ইসলামের আলোকে মা-বাবার প্রতি আচরণ শুধু প্রার্থীব নয়, এটা আখেরাতের পথও খুলে দেয়। যেভাবে মা বাবা হৃদয় জয় করবেন তা হাদিস ও কুরআনে নির্দেশনার মধ্যে সুনির্দিষ্ট ভাবে পথ দেখিয়ে দেয়। ভালোবাসা, সম্মান, দোয়া, খেদমত, আর শ্রদ্ধা এ পাঁচটি স্তম্ভের উপর গড়ে উঠবে সেই জীবন, যেখানে আপনি শুধু তাদের নয়, আল্লাহর কাছে প্রিয় হবেন।
ডিজিটাল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url