ডাকসু: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের অজানা কিছু কথা
ডাকসু: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের অজানা কিছু কথা
বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অজানা তথ্য
ডাকসু বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ বাংলাদেশের শিক্ষা ও রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই লেখায় আমরা ডাকসু সম্পর্কে অজানা কিছু কথা তুলে ধরব যা অনেকেরই অজানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ হিসেবে ডাকসু শুধু একটি নির্বাচিত সংস্থা নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র।
ডাকসুর জন্ম ও ইতিহাস: প্রাথমিক বছরগুলো
ডাকসু সম্পর্কে অজানা কিছু কথা বলতে গেলে প্রথমে এর জন্মইতিহাস জানা প্রয়োজন। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ২ বছর পর ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। ব্রিটিশ কলনিয়াল পিরিয়ড এ প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি শুরু থেকেই ছাত্রদের অধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রথম দিকে ডাকসু ছিল মূলত একটি কালচারাল এবং একাডেমিক ফোরাম, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি রাজনৈতিক এক্টিভিজমের কেন্দ্রীও প্লাটফরম এ পরিণত হয়।
ভাষা আন্দোলনে ডাকসুর ভূমিকা
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ডাকসুর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাকসু সম্পর্কে অজানা কিছু কথা মধ্যে একটি হলো যে, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির ধর্মঘট ও বিক্ষোভ ডাকসুর নেতৃত্বেই সংগঠিত হয়েছিল। ডাকসুর তৎকালীন নেতারা সরাসরি ভাষা আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমাবেশ ও সভা ডাকসুর উদ্যোগেই করা হতো, যা পরে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ডাকসুর অবদান
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ডাকসুর ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গেলে উল্লেখ করতে হবে কিভাবে ডাকসু ছাত্র ছাত্রীদেরকে পাকিস্তানী অপারেশনের বিরুদ্ধে জাগ্রত করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে ডাকসুর নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তখকার ডাকসু নেতা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদ হন।
ডাকসু নির্বাচনের ইতিহাস ও গুরুত্ব
ডাকসু নির্বাচন শুধুমাত্র একটি ছাত্র সংসদ নির্বাচন নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বারমিটারও বটে। ডাকসু সম্পর্কে অজানা কিছু কথা মধ্যে একটি হলো যে, ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল প্রায়ই জাতীয় নিরবাচন এর অউটকামকে প্রেডিক্ট করতে সাহায্য করে। ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত হলেও, এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর কোনো নির্বাচন হয়নি, যা ডাকসুর ইতিহাসে একটি ব্ল্যাক চ্যাপ্টার হিসেবে বিবেচিত।
ডাকসুর সাংগঠনিক কাঠামো
ডাকসু সম্পর্কে অজানা কথা বলতে গেলে এর সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। ডাকসুর সাংগঠনিক কাঠামোতে রয়েছে প্রেসিডেন্ট, ভাইস-প্রেসিডেন্ট, জেনারেল সেক্রেটারি এবং বিভিন্ন পদের সদস্য। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন হল এর প্রতিনিধি। ডাকসুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রসেসে সাধারণ ছাত্রদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থাও রয়েছে।
ডাকসু থেকে জাতীয় নেতাতে পরিণত হওয়া ব্যক্তিত্ব
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছেন ডাকসুর মাধ্যমে। ডাকসু সম্পর্কে অজানা কথা হলো যে, তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলেরই নেতৃত্বে আছেন সাবেক ডাকসু নেতারা. বাংলাদেশের সাবেক এম্পি, মন্ত্রি, এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা তাদের ক্যারিয়ার এর শুরুতে ডাকসুর সাথে যুক্ত ছিলেন।
ডাকসুর কালচারাল এক্টিভিটিস এবং সোশ্যাল কন্ট্রিবিউশন
অনেকে শুধু ডাকসুর পলিটিকাল এস্পেক্টই জানেন, কিন্তু ডাকসু সম্পর্কে অজানা কিছু কথা মধ্যে এর কালচারাল এবং সোশ্যাল এক্টিভিটিস ও উল্লেখযোগ্য। ডাকসু বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রাম, ডিবেট কম্পিটিশন, ব্লাড ডনেশন প্রোগ্রাম এবং ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট এক্টিভিটিস এর আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও ছাত্রদের ওয়েলফেয়ার এর জন্য বিভিন্ন প্রজেক্ট ডাকসু আন্ডারটেক করে।
ডাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৪ সালে, যা ছিল বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে একটি মাইলস্টোন।
১৯৯০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল, যা একটি রেকর্ড।
ডাকসুর ইতিহাসে প্রথম মহিলা প্রতিনিধি নির্বাচিত হন ১৯৬০-এর দশকে।
ডাকসুর অ্যাভকেসির সিদ্ধান্তেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ট্রান্সপোর্ট ফাচিলিটি চালু হয়।
ডাকসু এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডাকসুর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাকসু সম্পর্কে অজানা কিছু কথা মধ্যে উল্লেখ্য যে, সকল ডেমোক্রেসি মুভমেন্টে ডাকসু সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৬২ সালের ইডুকেশন কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, এবং ১৯৯০ সালের অটোক্রেচি বিরোধী আন্দোলনে ডাকসুর ভুমিকা ছিল ঐতিহাসিক।
ডাকসুর বর্তমান অবস্থা ও ফিউচার চ্যালেঞ্জ
২০১৮ সালে দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ডাকসু সম্পর্কে অজানা কিছু কথা আবার আলোচনায় এসেছে। তবে বর্তমানে ডাকসু অনেক রকমের চ্যালেঞ্জ-এর মুখোমুখি, এর মধ্যে পলিটিকাল পলারাইজেশন, স্টুডেন্ট পলিটিক্স এ ভায়লেন্স, এবং এডমিনিস্ট্রাশন এর সাথে কোওরডিনেশনের ইস্যু রয়েছে।
ডাকসু সম্পর্কে প্রচলিত কিছু মিসকনসেপশন
ডাকসু সম্পর্কে অজানা কিছু কথা বলতে গেলে কমন মিসকনসেপের কথাও উল্লেখ করতে হবে।নেটিজেনরা মনে করেন ডাকসু শুধুমাত্র পলিটিকাল এক্টিভিটিস-ই করে,কিন্তু এটা ঠিক নয়, ডাকসুর একাডেমিক এবং কালচারাল এক্টিভিটিস-ও অনেক। অনেকেই মনে করেন ডাকসু শুধুমাত্র স্পেসিফিক পলিটিকাল ইডিওলজির স্টুডেন্ট এর জন্য,এটা পুরাপুরি সত্য না হলেও ডাকসু পলিটিকাল ইডিওলজির ছাত্রদের রিপ্রেজেন্টেশন করে।
ডাকসু সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন (FAQ)
ডাকসুর ফুল ফর্ম হলো "ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন" বা "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ"। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগঠন যা ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করে ।
ডাকসু প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছর পর।
সাধারণত ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত হওয়ার কথা, কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অন্যান্য কারনে ডাকসু নির্বাচন পস্টপন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ডাকসুর প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট সরাসরি ছাত্রদের ভোটে নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিবন্ধিত ছাত্র-ছাত্রী ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন।
২০১৮ সালের ডাকসু নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন নুরুল হক নুর এবং জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাচিত হন গোলাম রাব্বানী।
ডাকসু ছাত্রদের একাডেমিক, কালচারাল, এবং সোশাল এক্টিভিটিস- তে সাহায্য করে, ছাত্রদের প্রব্লেমস এডমিনিস্ট্রেশন- এর কাছে উপস্থাপন করে, এবং বিভিন্ন ওয়েলফেয়ার এক্টিভিটিস-এর আয়োজন করে।
ডিজিটাল আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url